আবদুর রহমান / Popular Blog BD
”সূরা আল কুরাইশ একটি মক্কায় অবতীর্ণ সূরা, যা কুরাইশ গোত্রের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ ও নিরাপত্তার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। এই সূরায় কুরাইশ গোত্রের শীত ও গ্রীষ্মকালের বাণিজ্যিক যাত্রার উল্লেখ করা হয়েছে, যা তাদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির মূল ভিত্তি ছিল। আল্লাহ কুরাইশ গোত্রকে ক্ষুধা থেকে রক্ষা করেছেন এবং তাদেরকে নিরাপত্তা দিয়েছেন। এই করুণার জন্য তাদের উচিত আল্লাহর উপাসনা করা এবং তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা। সূরা আল কুরাইশ আমাদের জীবনে আল্লাহর করুণা, ঐক্য ও কৃতজ্ঞতার গুরুত্ব শেখায়”
সূরা আল কুরাইশ
আরবি:
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَـٰنِ الرَّحِيمِ
لِإِيلَـٰفِ قُرَيْشٍ
إِيلَـٰفِهِمْ رِحْلَةَ الشِّتَاءِ وَالصَّيْفِ
فَلْيَعْبُدُوا رَبَّ هَـٰذَا الْبَيْتِ
الَّذِي أَطْعَمَهُم مِّن جُوعٍ وَءَامَنَهُم مِّنْ خَوْفٍ
বাংলা উচ্চারণ:
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
লি’ইলা-ফি কুরাইশিন
ইলা-ফিহিম রিহলাতাশ শিতা-ই ওয়াস সাইফি
ফাল্যাবুদু রাব্বা হা-যাল বাইত
আল্লাযি আতআমাহুম মিঙ্কু-ইয়িন ওয়া আমানাহুম মিন খাওফ
বাংলা অর্থ:
পরম করুণাময়, অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।
১. কুরাইশ গোত্রের ইলাফের কারণে, ২. তাদের শীত ও গ্রীষ্মকালের সফরের কারণে, ৩. অতএব তারা এই ঘরের প্রভুর ইবাদত করুক, ৪. যিনি তাদের ক্ষুধা থেকে রক্ষা করেছেন এবং ভয় থেকে নিরাপদ করেছেন।
সূরা আল কুরাইশ নাযিলের প্রেক্ষাপট
সূরা আল কুরাইশ মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে এবং এটি কুরাইশ গোত্রের ইতিহাস ও সম্মানের সাথে সম্পর্কিত। কুরাইশ গোত্র ছিল মক্কার সবচেয়ে সম্মানিত এবং প্রভাবশালী গোত্র, যাদের প্রধান দায়িত্ব ছিল কাবা শরীফের রক্ষণাবেক্ষণ এবং হাজিদের সেবা করা।
প্রেক্ষাপট:
- কাবা শরীফ এবং কুরাইশ গোত্রের গুরুত্ব: কুরাইশ গোত্র কাবা শরীফের রক্ষণাবেক্ষণ এবং হাজিদের সেবা করত, যা তাদেরকে আরবের অন্যান্য গোত্রের মধ্যে বিশেষ সম্মান ও মর্যাদা এনে দেয়।
- ব্যবসা-বাণিজ্য এবং নিরাপত্তা: কুরাইশ গোত্র শীতকালে ইয়েমেন এবং গ্রীষ্মকালে সিরিয়া ও লেভান্টের দিকে বাণিজ্যিক যাত্রা করত। আল্লাহ এই সুরায় তাদের এই সফরের নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধির কথা উল্লেখ করেছেন এবং তাদেরকে আল্লাহর উপাসনা করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।
- আল্লাহর করুণা ও সুরক্ষা: আল্লাহ কুরাইশ গোত্রকে বিপদ এবং ক্ষুধা থেকে রক্ষা করেছেন এবং তাদেরকে শান্তি ও নিরাপত্তা দিয়েছেন। এই সুরা তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেয় যে, এই সকল করুণা ও সুরক্ষা আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে এবং তাই তাদের উচিত আল্লাহর উপাসনা করা।
মূল বার্তা:
এই সুরার মূল বার্তা হলো কুরাইশ গোত্রকে আল্লাহর করুণা ও সুরক্ষা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তাদেরকে আল্লাহর উপাসনা করতে উৎসাহিত করা। আল্লাহ তাদেরকে যেসব নিয়ামত ও নিরাপত্তা দিয়েছেন, সেগুলোর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার জন্য তাদেরকে আল্লাহর প্রতি একনিষ্ঠ থাকা এবং তাঁর উপাসনা করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
সূরা আল কুরাইশ এর ব্যাখ্যা
সূরা আল কুরাইশ এর ব্যাখ্যা
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَـٰنِ الرَّحِيمِ
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
পরম করুণাময়, অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।
لِإِيلَـٰفِ قُرَيْشٍ
লি’ইলা-ফি কুরাইশিন
কুরাইশ গোত্রের ইলাফের কারণে।
ব্যাখ্যা: এই আয়াতে কুরাইশ গোত্রের ঐক্য এবং সম্মিলিত অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থানের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। কুরাইশ গোত্র ছিল মক্কার প্রভাবশালী এবং তারা কাবা শরীফের রক্ষক ছিল, যা তাদেরকে অন্যান্য গোত্রের থেকে আলাদা এবং সম্মানিত করেছিল।
إِيلَـٰفِهِمْ رِحْلَةَ الشِّتَاءِ وَالصَّيْفِ
ইলা-ফিহিম রিহলাতাশ শিতা-ই ওয়াস সাইফি
তাদের শীত ও গ্রীষ্মকালের সফরের কারণে।
ব্যাখ্যা: কুরাইশ গোত্রের বাণিজ্যিক কার্যক্রমের কথা এখানে উল্লেখ করা হয়েছে। শীতকালে তারা ইয়েমেন এবং গ্রীষ্মকালে সিরিয়া ও লেভান্টে বাণিজ্যিক যাত্রা করত। এই সফরগুলো তাদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এবং স্থিতিশীলতার মূল কারণ ছিল।
فَلْيَعْبُدُوا رَبَّ هَـٰذَا الْبَيْتِ
ফাল্যাবুদু রাব্বা হা-যাল বাইত
অতএব তারা এই ঘরের প্রভুর ইবাদত করুক।
ব্যাখ্যা: এই আয়াতে কুরাইশ গোত্রকে আল্লাহর প্রতি উপাসনা করার আহ্বান জানানো হয়েছে। তাদের উচিত সেই প্রভুর উপাসনা করা যিনি তাদেরকে এত সম্মান এবং নিরাপত্তা দিয়েছেন।
الَّذِي أَطْعَمَهُم مِّن جُوعٍ وَءَامَنَهُم مِّنْ خَوْفٍ
আল্লাযি আতআমাহুম মিঙ্কু-ইয়িন ওয়া আমানাহুম মিন খাওফ
যিনি তাদের ক্ষুধা থেকে রক্ষা করেছেন এবং ভয় থেকে নিরাপদ করেছেন।
ব্যাখ্যা: আল্লাহ কুরাইশ গোত্রকে ক্ষুধা থেকে রক্ষা করেছেন এবং তাদেরকে নিরাপত্তা দিয়েছেন। এই আয়াত তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেয় যে, আল্লাহর করুণার কারণে তারা অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে সুরক্ষিত ছিল। তাই তাদের উচিত কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে আল্লাহর উপাসনা করা।
সারমর্ম:
এই সূরাটি মূলত কুরাইশ গোত্রের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ এবং তাদের করণীয় সম্পর্কে শিক্ষা দেয়। কুরাইশ গোত্র আল্লাহর করুণা এবং সুরক্ষা পেয়েছে, যা তাদের সম্মান এবং প্রভাব প্রতিষ্ঠিত করেছে। তাই তাদের উচিত আল্লাহর উপাসনা করা এবং তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা।
সূরা আল কুরাইশ এর শিক্ষা
সূরা আল কুরাইশ থেকে আমরা কিছু গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা গ্রহণ করতে পারি, যা আমাদের জীবনের বিভিন্ন দিকের জন্য প্রাসঙ্গিক ও গুরুত্বপূর্ণ।
১. আল্লাহর করুণা ও অনুগ্রহের প্রতি কৃতজ্ঞতা
সূরা আল কুরাইশ আমাদের শেখায় যে আল্লাহর অনুগ্রহ ও করুণা আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বিরাজমান। কুরাইশ গোত্র আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ পেয়েছিল, যেমন নিরাপত্তা ও বাণিজ্যিক সমৃদ্ধি। এই করুণার জন্য আমাদের উচিত আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা এবং তাঁর উপাসনা করা।
২. ঐক্য ও সমন্বয়ের গুরুত্ব
কুরাইশ গোত্রের ঐক্য ও সম্মিলিত প্রচেষ্টা তাদেরকে সমাজে সম্মান ও সমৃদ্ধি এনে দিয়েছিল। আমরা এই শিক্ষা থেকে বুঝতে পারি যে, জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ঐক্য, সহযোগিতা ও সমন্বয়ের মাধ্যমে আমরা আরও সফল হতে পারি।
৩. নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার মূল্য
আল্লাহ কুরাইশ গোত্রকে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা দিয়েছিলেন, যা তাদের বাণিজ্য ও জীবনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আমাদের উচিত জীবনে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার গুরুত্ব বুঝে সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া।
৪. অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও সততার সঙ্গে উপার্জন
কুরাইশ গোত্রের বাণিজ্যিক সফলতা আমাদের শেখায় যে, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের জন্য সততা ও পরিশ্রম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদেরও উচিত জীবনে সততার সাথে উপার্জন করা এবং অর্থনৈতিক কার্যক্রমে নিয়ম মেনে চলা।
৫. আল্লাহর প্রতি নির্ভরশীলতা
কুরাইশ গোত্র আল্লাহর করুণার উপর নির্ভরশীল ছিল। আমাদেরও উচিত জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহর উপর নির্ভর করা এবং তাঁর উপর বিশ্বাস রাখা।
৬. উপাসনার গুরুত্ব
সূরা আল কুরাইশের একটি প্রধান শিক্ষা হল আল্লাহর প্রতি উপাসনা করা। আল্লাহর করুণা ও অনুগ্রহের জন্য আমাদের উচিত প্রতিদিন তাঁর উপাসনা করা এবং তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা।
৭. অতীতের ইতিহাস থেকে শিক্ষা গ্রহণ
কুরাইশ গোত্রের ইতিহাস আমাদের শেখায় যে, অতীতের ঘটনার মাধ্যমে আমরা অনেক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা গ্রহণ করতে পারি। ইতিহাস আমাদেরকে প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা দেয়, যা আমাদের ভবিষ্যৎকে আরও উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে।
এই শিক্ষাগুলো আমাদের ব্যক্তিগত, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক জীবনে প্রয়োগ করলে আমরা আরও সফল ও সাফল্যপূর্ণ জীবনযাপন করতে পারি।