আল কোরআনের দাওয়াহ ও প্রচারঃ দায়ীর ২০টি গুণাবলী

আবদুর রহমান / Popular Blog BD

কোরআনের দাওয়াহ ও প্রচার ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং এটি একটি ধর্মীয় দায়িত্ব হিসেবে মুসলমানদের উপর অর্পিত হয়েছে। দাওয়াহর মাধ্যমে ইসলামের মুল বার্তা সবার কাছে পৌঁছে দেয়া সম্ভব। ইসলামের শান্তিপূর্ণ, যুক্তিসঙ্গত এবং প্রজ্ঞাপূর্ণ শিক্ষা প্রচারের মাধ্যমে মানবজাতির কল্যাণ সম্ভব। এজন্য ধৈর্য, প্রজ্ঞা এবং সুন্দর আচরণের মাধ্যমে দাওয়াহ কার্যক্রম পরিচালনা করা উচিত।

দাওয়াহ অর্থ “আহ্বান” বা “আমন্ত্রণ” যা ইসলামে আল্লাহর পথে মানুষকে আহ্বান করার প্রক্রিয়া বোঝায়। এটি ইসলাম প্রচারের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান এবং কোরআনে বারবার এটির উপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। কোরআনের দাওয়াহ ও প্রচার একটি গভীর ও বিস্তৃত বিষয়, যা ইসলামের মূল শিক্ষা ও আদর্শকে মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার প্রচেষ্টা।

কোরআনের দাওয়াহর গুরুত্ব

দাওয়াহ ইসলামের একটি কেন্দ্রীয় স্তম্ভ। দাওয়াহর মাধ্যমে মানুষকে ইসলামের পথে আহ্বান করা হয় এবং এটি মুসলমানদের উপর একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হিসেবে আরোপিত হয়েছে। আল কোরআনের দাওয়াহর গুরুত্ব অসীম এবং এটি ইসলামের বিস্তৃতি এবং সঠিক বার্তা প্রচারের মূল ভিত্তি।

কোরআনের দাওয়াহর নৈতিক ভিত্তি

কোরআনে বারবার দাওয়াহর গুরুত্ব উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন:

“আর তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল থাকা উচিত, যারা আহ্বান করবে সৎ কাজের দিকে, আদেশ করবে সৎকাজ করতে এবং নিষেধ করবে অসৎকাজ থেকে। আর এরাই সফলকাম।” (সূরা আলে ইমরান: ১০৪)

এই আয়াতটি স্পষ্ট করে দেয় যে দাওয়াহ একটি মৌলিক ধর্মীয় দায়িত্ব এবং এটি সমাজের উন্নতি ও কল্যাণের জন্য অপরিহার্য।

নবী মুহাম্মদ (সা.) এর দাওয়াহর উদাহরণ

নবী মুহাম্মদ (সা.) তার জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে দাওয়াহর চর্চা করেছেন। তিনি মক্কায় এবং মদিনায় দাওয়াহ প্রচার করে ইসলামের মূল বার্তা প্রচার করেছেন। নবীর দাওয়াহর পদ্ধতি ছিল শান্তিপূর্ণ, যুক্তিসঙ্গত এবং মানবিক।

  1. শান্তিপূর্ণ প্রচার: নবী মুহাম্মদ (সা.) সর্বদা শান্তিপূর্ণভাবে এবং ধৈর্যের সঙ্গে দাওয়াহ দিতেন। কোরআনে বলা হয়েছে:”আর তুমি ধৈর্যধারণ করো; তোমার ধৈর্য তো আল্লাহর সাহায্য ব্যতীত হতে পারে না।” (সূরা নাহল: ১২৭)
  2. বুদ্ধি ও প্রজ্ঞার ব্যবহার: নবী (সা.) দাওয়াহর ক্ষেত্রে সর্বদা প্রজ্ঞা ও জ্ঞান ব্যবহার করতেন। কোরআনে নির্দেশ দেয়া হয়েছে:”তুমি প্রজ্ঞা ও সদুপদেশের মাধ্যমে তোমার প্রভুর পথে আহ্বান করো এবং উত্তম পদ্ধতিতে তাদের সঙ্গে বিতর্ক করো।” (সূরা নাহল: ১২৫)

দাওয়াহর সামাজিক গুরুত্ব

দাওয়াহ কেবলমাত্র ধর্মীয় নয়, এটি সামাজিক পরিবর্তন ও উন্নয়নের জন্য একটি শক্তিশালী হাতিয়ার। দাওয়াহর মাধ্যমে:

  1. মানবিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা: দাওয়াহর মাধ্যমে সৎকাজ, ন্যায়বিচার, এবং মানবিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা করা যায়। এটি একটি সমাজকে সৎ ও ন্যায়পরায়ণ পথে পরিচালিত করে।
  2. অসৎকাজ প্রতিরোধ: দাওয়াহর মাধ্যমে অসৎকাজ, অপরাধ এবং সমাজবিরোধী কার্যকলাপ থেকে মানুষকে বিরত রাখা যায়। কোরআনে উল্লেখ রয়েছে:”তোমরা সৎকাজের আদেশ দাও এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ করো।” (সূরা তওবা: ৭১)

দাওয়াহর ধর্মীয় গুরুত্ব

ইসলামের দাওয়াহ মুসলমানদের উপর একটি ফরজ কাজ হিসেবে নির্ধারিত হয়েছে। এটি ইসলামের বুনিয়াদী বিশ্বাস এবং রীতিনীতির প্রচার ও রক্ষা করে। দাওয়াহর মাধ্যমে মানুষ আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাসী হয় এবং ইসলামের মূল শিক্ষাগুলো পালন করতে উদ্বুদ্ধ হয়।

দাওয়াহর পদ্ধতি

দাওয়াহর কার্যকর পদ্ধতি ও কৌশল কোরআনে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে।

  1. প্রজ্ঞা ও সদুপদেশ: কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন,”তুমি প্রজ্ঞা ও সদুপদেশের মাধ্যমে তোমার প্রভুর পথে আহ্বান করো এবং উত্তম পদ্ধতিতে তাদের সঙ্গে বিতর্ক করো” (সূরা নাহল: ১২৫)।এখানে প্রজ্ঞা ও সদুপদেশের মাধ্যমে আহ্বান করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে, যা একটি সহনশীল ও যুক্তিসঙ্গত দাওয়াহর ভিত্তি।
  2. শান্তিপূর্ণ ও ধৈর্যশীলতা: দাওয়াহর ক্ষেত্রে নবী মুহাম্মদ (সা.) এর জীবন একটি আদর্শ উদাহরণ। তিনি সর্বদা শান্তিপূর্ণ ও ধৈর্যশীলতার মাধ্যমে মানুষকে ইসলামের পথে আহ্বান করতেন। কোরআনে বলা হয়েছে,”তুমি প্রতিশোধ গ্রহণের পরিবর্তে ক্ষমা প্রদর্শন করো এবং উত্তম পদ্ধতিতে আহ্বান করো।” (সূরা ফুসসিলাত: ৩৪)
  3. ব্যক্তিগত উদাহরণ: দাওয়াহর সবচেয়ে শক্তিশালী পদ্ধতি হল নিজের জীবনের মাধ্যমে ইসলামের শিক্ষাগুলো প্রয়োগ করা। নবী মুহাম্মদ (সা.) নিজেই একটি জীবন্ত কোরআন ছিলেন, যার চরিত্র ও আচরণ মানুষকে ইসলামের দিকে আকৃষ্ট করত।
  4. সাংবাদিকতা ও সাহিত্য: কোরআনের দাওয়াহ প্রচারে বিভিন্ন লেখনী, গ্রন্থ, পত্র-পত্রিকা এবং অনলাইন মিডিয়া ব্যবহার করা যেতে পারে। ইসলামের সঠিক বার্তা পৌঁছাতে লেখালেখি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

দাওয়াহর চ্যালেঞ্জ

দাওয়াহর পথে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। একটি বড় চ্যালেঞ্জ হল বিভিন্ন মতাদর্শ ও বিশ্বাসের মানুষের মধ্যে ইসলামের সঠিক বার্তা পৌঁছানো। কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেছেন,

“তোমরা কি সেরা উম্মত যারা মানুষকে সৎ কাজের আদেশ দেয় এবং অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখে এবং আল্লাহতে বিশ্বাস করে” (সূরা আলে ইমরান: ১১০)।

এই আয়াতটি আমাদের দায়িত্বের গুরুত্ব তুলে ধরে। দাওয়াহ দিতে গেলে অনেক চ্যালেঞ্জ আসবে, কিন্তু সেগুলো ধৈর্য ও প্রজ্ঞার সঙ্গে মোকাবেলা করতে হবে।

দাওয়াহর উদাহরণ

ইতিহাসে দাওয়াহর অনেক সফল উদাহরণ রয়েছে। নবী মুহাম্মদ (সা.) এবং তাঁর সাহাবীরা বিভিন্ন জাতি ও সম্প্রদায়ের কাছে ইসলাম প্রচার করেছেন। তাদের দাওয়াহর ফলেই ইসলাম একটি বিশ্ব ধর্মে পরিণত হয়েছে।

  1. নবী মুহাম্মদ (সা.) এর দাওয়াহ: তিনি প্রথমে মক্কার মানুষদের মধ্যে ইসলাম প্রচার শুরু করেন। প্রথমে প্রতিরোধ ও নির্যাতনের সম্মুখীন হলেও ধৈর্য ও প্রজ্ঞার সঙ্গে দাওয়াহ অব্যাহত রাখেন।
  2. সাহাবীদের দাওয়াহ: সাহাবীরা ইসলাম প্রচারে নিরলস পরিশ্রম করেছেন। হযরত আবু বকর (রাঃ) তার নিজের সম্পদ ও প্রভাব ব্যবহার করে বহু মানুষকে ইসলাম গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করেছেন। হযরত উমর (রাঃ) তার দৃঢ়তা ও সাহসিকতার মাধ্যমে ইসলাম প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।

আধুনিক দাওয়াহ

বর্তমান যুগেও দাওয়াহর প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। আধুনিক প্রযুক্তি, ইন্টারনেট এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম দাওয়াহর একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। আজকাল মানুষ অনলাইনে ইসলামের সম্পর্কে জানতে পারে এবং ইসলাম গ্রহণ করতে পারে।

  1. অনলাইন দাওয়াহ: বিভিন্ন ওয়েবসাইট, ব্লগ, ভিডিও, এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মাধ্যমে ইসলাম প্রচার করা হচ্ছে। এটি দাওয়াহর একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হয়ে উঠেছে।
  2. সামাজিক ও মানবিক কার্যক্রম: দাওয়াহর অংশ হিসেবে বিভিন্ন সামাজিক ও মানবিক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে, যেমন গরীব ও অসহায়দের সাহায্য করা, শিক্ষা প্রদান, এবং স্বাস্থ্যসেবা।

একজন দায়ীর গুণাবলীঃ

দাওয়াহ অর্থ “আহ্বান করা” বা “আমন্ত্রণ করা” এবং এটি ইসলামের একটি কেন্দ্রীয় স্তম্ভ। একজন দায়ী হলেন সেই ব্যক্তি যিনি আল্লাহর পথে মানুষকে আহ্বান করেন এবং ইসলামের বার্তা প্রচার করেন। একজন সফল দায়ীর মধ্যে অনেক গুরুত্বপূর্ণ গুণাবলী থাকতে হবে যা তাকে দাওয়াহর কাজে সক্ষম এবং সফল করে তোলে। এই গুণাবলীর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি নিম্নে বিস্তারিতভাবে আলোচিত হল:

১. গভীর ঈমান ও তাওয়াক্কুল

একজন দায়ীর প্রথম এবং প্রধান গুণাবলী হল তার গভীর ঈমান এবং আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা। তাকে অবশ্যই ইসলামের মূল শিক্ষাগুলো সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হবে এবং সেগুলোর প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস থাকতে হবে। আল্লাহ তাআলা কোরআনে বলেন:

“আর আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করো। আল্লাহই যথেষ্ট তত্ত্বাবধায়ক।” (সূরা আহযাব: ৩)

২. প্রজ্ঞা ও জ্ঞান

দায়ীকে প্রজ্ঞা ও জ্ঞানের অধিকারী হতে হবে। তাকে ইসলামের শিক্ষা, কোরআন ও হাদিসের ব্যাখ্যা, এবং ইসলামের ইতিহাস সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হবে। কোরআনে বলা হয়েছে:

“তুমি প্রজ্ঞা ও সদুপদেশের মাধ্যমে তোমার প্রভুর পথে আহ্বান করো এবং উত্তম পদ্ধতিতে তাদের সঙ্গে বিতর্ক করো।” (সূরা নাহল: ১২৫)

৩. ধৈর্য ও সহনশীলতা

দাওয়াহর পথে ধৈর্য ও সহনশীলতা অপরিহার্য। বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ ও প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হবে এবং সেগুলোকে ধৈর্য সহকারে মোকাবেলা করতে হবে। আল্লাহ তাআলা কোরআনে বলেন:

“আর তুমি ধৈর্যধারণ করো; তোমার ধৈর্য তো আল্লাহর সাহায্য ব্যতীত হতে পারে না।” (সূরা নাহল: ১২৭)

৪. সদাচরণ ও বিনয়

একজন দায়ীর মধ্যে সদাচরণ ও বিনয় থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তার কথাবার্তা ও আচরণ মানুষের জন্য অনুকরণীয় হতে হবে। নবী মুহাম্মদ (সা.) এর চরিত্র ও আচরণ আমাদের জন্য একটি আদর্শ উদাহরণ। কোরআনে বলা হয়েছে:

“তুমি ক্ষমার পথ অবলম্বন করো, সৎকাজের আদেশ দাও এবং মূর্খদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নাও।” (সূরা আরাফ: ১৯৯)

৫. আন্তরিকতা ও নৈতিক সততা

দায়ীকে সব সময় আন্তরিক ও নৈতিকভাবে সৎ হতে হবে। তার দাওয়াহর কাজটি অবশ্যই নিঃস্বার্থভাবে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে হতে হবে। কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন:

“যে কেউ আল্লাহর পথে আহ্বান করে, সে যেন নিজেই উত্তম কাজ করে এবং বলে যে, আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই।” (সূরা ফুসসিলাত: ৩৩)

৬. যোগাযোগ দক্ষতা

একজন দায়ীর মধ্যে ভালো যোগাযোগ দক্ষতা থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাকে সহজ ও স্পষ্ট ভাষায় ইসলামের বার্তা পৌঁছাতে সক্ষম হতে হবে। তার বক্তব্য সংক্ষিপ্ত, প্রাসঙ্গিক এবং আকর্ষণীয় হতে হবে। কোরআনে বলা হয়েছে:

“আর মানুষের সাথে ভালোভাবে কথা বলো।” (সূরা বাকারা: ৮৩)

৭. আত্মবিশ্বাস ও সাহসিকতা

দাওয়াহর পথে একজন দায়ীর আত্মবিশ্বাস ও সাহসিকতা থাকা অত্যন্ত প্রয়োজন। তাকে সত্যের পক্ষে দৃঢ়ভাবে দাঁড়াতে হবে এবং যেকোনো পরিস্থিতিতে নিজের বিশ্বাস অক্ষুণ্ণ রাখতে হবে। কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন:

“আর যে আমার পথে চেষ্টা করে, আমি অবশ্যই তাকে আমার পথে পরিচালিত করব।” (সূরা আনকাবুত: ৬৯)

৮. বিনয় ও আন্তরিকতা

দাওয়াহর ক্ষেত্রে একজন দায়ীর বিনয়ী ও আন্তরিক হওয়া জরুরি। বিনয় ও আন্তরিকতার মাধ্যমে তিনি মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিতে পারেন এবং তাদেরকে ইসলামের পথে আহ্বান করতে পারেন। কোরআনে বলা হয়েছে:

“আর তুমি ক্ষমার পথে চলো এবং উত্তম পথে আহ্বান করো।” (সূরা হিজর: ৮৫)

৯. জীবনযাত্রার উদাহরণ

একজন দায়ীকে নিজের জীবনযাত্রার মাধ্যমে ইসলামের উদাহরণ স্থাপন করতে হবে। তার চরিত্র, আচরণ, এবং জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপ ইসলামের শিক্ষা অনুযায়ী হতে হবে। নবী মুহাম্মদ (সা.) এর জীবন আমাদের জন্য একটি সম্পূর্ণ আদর্শ।

১০. আন্তরিক দোয়া

একজন দায়ীর উচিত সর্বদা আল্লাহর কাছে দোয়া করা, যাতে তার দাওয়াহ কার্যক্রম সফল হয় এবং মানুষ ইসলামের পথে আসতে পারে। দোয়ার মাধ্যমে তিনি আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করতে পারেন এবং তার কাজে বরকত আশা করতে পারেন।

১১. পরিশ্রম ও অধ্যবসায়

একজন দায়ীর মধ্যে পরিশ্রম ও অধ্যবসায় থাকা জরুরি। তাকে দাওয়াহর জন্য নিরলস পরিশ্রম করতে হবে এবং কখনো হতাশ হওয়া উচিত নয়। কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেছেন:

“আর তোমরা তাদের মধ্য থেকে এমন একটি দল তৈরি করো, যারা আহ্বান করবে সৎকাজের দিকে এবং নিষেধ করবে অসৎকাজ থেকে। আর এরাই সফলকাম।” (সূরা আলে ইমরান: ১০৪)

১২. ভালো শোনা এবং বোঝার ক্ষমতা

একজন দায়ীর মধ্যে ভালো শোনা এবং বোঝার ক্ষমতা থাকতে হবে। তাকে মানুষের সমস্যা, প্রশ্ন, এবং উদ্বেগ শুনতে হবে এবং সেগুলো বোঝার চেষ্টা করতে হবে। কোরআনে বলা হয়েছে:

“আর যারা কথা শুনে তা অনুসরণ করে উত্তম কথাগুলো অনুসরণ করে, তারাই সেই লোক যাদের আল্লাহ সৎপথে পরিচালিত করেছেন এবং তারাই প্রজ্ঞাবান।” (সূরা যুমার: ১৮)

১৩. কৌশলী ও সৃজনশীল

দাওয়াহর ক্ষেত্রে একজন দায়ীর কৌশলী ও সৃজনশীল হওয়া জরুরি। তাকে বিভিন্ন পদ্ধতি ও কৌশল ব্যবহার করে ইসলামের বার্তা প্রচার করতে হবে। কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেছেন:

“তোমরা সৎকাজের আদেশ দাও এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ করো এবং আল্লাহর পথে সংগ্রাম করো যথাযথভাবে।” (সূরা হাজ্জ: ৭৮)

১৪. উদারতা ও উদার মনোভাব

একজন দায়ীর মধ্যে উদারতা থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাকে দাওয়াহর কাজে উদার মনোভাব নিয়ে মানুষের সাথে মেলামেশা করতে হবে এবং তাদেরকে ইসলামের দিকে আহ্বান করতে হবে। আল্লাহ তাআলা কোরআনে বলেন:

“আর যারা নিজেদের ধন-সম্পদ ব্যয় করে দিনে ও রাতে, গোপনে ও প্রকাশ্যে, তাদের জন্য তাদের প্রভুর নিকট পুরস্কার রয়েছে। আর তাদের কোনো ভয় নেই, তারা দুঃখিত হবে না।” (সূরা বাকারা: ২৭৪)

১৫. বিচক্ষণতা ও পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত গ্রহণ

একজন দায়ীর মধ্যে বিচক্ষণতা থাকা আবশ্যক। তাকে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে জানতে হবে এবং পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে সঠিক পদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে। কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন:

“আর আমার এই পথ হল সঠিক পথ। সুতরাং তোমরা এরই অনুসরণ করো এবং অন্যান্য পথ অনুসরণ করো না, তা তোমাদেরকে তার পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেবে।” (সূরা আনআম: ১৫৩)

১৬. নম্রতা ও ধীরতা

দাওয়াহর ক্ষেত্রে একজন দায়ীর মধ্যে নম্রতা ও ধীরতা থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাকে মানুষের সাথে বিনয়ীভাবে এবং ধীরে ধীরে কথা বলতে হবে। কোরআনে বলা হয়েছে:

“আর তোমার প্রভুর আদেশ অনুসারে ধৈর্য ধারণ করো।” (সূরা মুদ্দাসসির: ৭)

১৭. পরম সহিষ্ণুতা

একজন দায়ীর মধ্যে পরম সহিষ্ণুতা থাকা জরুরি। তাকে প্রতিকূল পরিস্থিতি এবং বিরোধীতার মুখে ধৈর্যশীল ও সহিষ্ণু হতে হবে। আল্লাহ তাআলা কোরআনে বলেন:

“আর যারা ধৈর্যধারণ করে এবং ভালো কাজ করে, তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা এবং মহা পুরস্কার।” (সূরা হুদ: ১১)

১৮. শক্তি ও উদ্যম

দাওয়াহর কাজে একজন দায়ীর মধ্যে শারীরিক ও মানসিক শক্তি এবং উদ্যম থাকা অত্যন্ত প্রয়োজন। তাকে সর্বদা উদ্যমী ও কর্মঠ থাকতে হবে। আল্লাহ তাআলা কোরআনে বলেন:

“আর যারা আমার পথে সংগ্রাম করে, আমি অবশ্যই তাদেরকে আমার পথে পরিচালিত করব।” (সূরা আনকাবুত: ৬৯)

১৯. সৃজনশীলতা ও নতুনত্ব

একজন দায়ীর মধ্যে সৃজনশীলতা এবং নতুনত্ব থাকা প্রয়োজন। তাকে দাওয়াহর কাজে নতুন নতুন পদ্ধতি ও কৌশল ব্যবহার করতে হবে যাতে মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করা যায়। কোরআনে বলা হয়েছে:

“আর যারা কথা শুনে তা অনুসরণ করে উত্তম কথাগুলো অনুসরণ করে, তারাই সেই লোক যাদের আল্লাহ সৎপথে পরিচালিত করেছেন এবং তারাই প্রজ্ঞাবান।” (সূরা যুমার: ১৮)

২০. ইসলামের প্রতি গভীর ভালবাসা

একজন দায়ীর মধ্যে ইসলামের প্রতি গভীর ভালবাসা থাকা আবশ্যক। তাকে ইসলামের শিক্ষা এবং মূল নীতিগুলো হৃদয়ে ধারণ করতে হবে এবং সে ভালোবাসা থেকেই দাওয়াহর কাজে লিপ্ত থাকতে হবে। কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন:

“বল, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসো, তাহলে আমাকে অনুসরণ করো, আল্লাহও তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের পাপগুলো ক্ষমা করবেন।” (সূরা আলে ইমরান: ৩১)

উপরোক্ত গুণাবলীসহ আরো অনেক গুণ একজন দায়ীর মধ্যে থাকা প্রয়োজন। এই গুণাবলীর সমন্বয় একজন দায়ীকে তার দাওয়াহর কাজে সফল এবং আল্লাহর প্রিয় বান্দায় পরিণত করতে পারে। একজন দায়ীর দায়িত্ব অত্যন্ত মহান এবং এর জন্য তাকে সৎ, নিষ্ঠাবান এবং আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা রাখতে হবে। এসব গুণাবলী একজন দায়ীকে তার দাওয়াহর কাজে সফল এবং আল্লাহর প্রিয় বান্দায় পরিণত করতে পারে।

কোরআনের দাওয়াহ ও প্রচার ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং এটি একটি ধর্মীয় দায়িত্ব হিসেবে মুসলমানদের উপর অর্পিত হয়েছে। দাওয়াহর মাধ্যমে ইসলামের মুল বার্তা সবার কাছে পৌঁছে দেয়া সম্ভব। ইসলামের শান্তিপূর্ণ, যুক্তিসঙ্গত এবং প্রজ্ঞাপূর্ণ শিক্ষা প্রচারের মাধ্যমে মানবজাতির কল্যাণ সম্ভব। এজন্য ধৈর্য, প্রজ্ঞা এবং সুন্দর আচরণের মাধ্যমে দাওয়াহ কার্যক্রম পরিচালনা করা উচিত। দাওয়াহর এই প্রচেষ্টা আমাদের পৃথিবীকে একটি শান্তিপূর্ণ ও মানবিক সমাজে পরিণত করতে পারে।

Leave a Comment