ঈমানদারদের ৩০ টি মৌলিক গুণাবলী

সংকলনে- আবদুর রহমান

মোমিন বা ঈমানদার এর পরিচয় হলো একজন ব্যক্তি যিনি ইসলামের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস রাখেন এবং তার জীবন ইসলামের নিয়ম-কানুন অনুযায়ী পরিচালিত করেন। তিনি আল্লাহ, তার নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ), এবং ইসলামের সকল মৌলিক বিশ্বাসে বিশ্বাসী। মোমিন ব্যক্তির কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো:

  1. আল্লাহতে বিশ্বাস: আল্লাহর একত্ববাদে (তাওহীদ) অটল বিশ্বাস রাখা।
  2. নবীদের প্রতি বিশ্বাস: সকল নবী ও রাসুলদের প্রতি বিশ্বাস রাখা।
  3. কুরআনে বিশ্বাস: পবিত্র কুরআনকে আল্লাহর সর্বশেষ এবং সম্পূর্ণ বাণী হিসেবে গ্রহণ করা।
  4. ফেরেশতাদের প্রতি বিশ্বাস: ফেরেশতাদের অস্তিত্ব এবং তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে বিশ্বাস রাখা।
  5. পরকাল বা আখিরাতে বিশ্বাস: মৃত্যুর পর জীবনের এবং বিচার দিবসের প্রতি বিশ্বাস রাখা।
  6. তাকদিরে বিশ্বাস: ভাল-মন্দ সমস্ত কিছু আল্লাহর ফয়সালা অনুযায়ী ঘটে এ বিশ্বাস রাখা।

একজন মোমিন তার দৈনন্দিন জীবনে নামাজ আদায়, রোজা পালন, জাকাত প্রদান, এবং হজ পালন করে থাকে, যদি সে সক্ষম হয়। তার চরিত্রে সততা, ধৈর্য, নম্রতা, এবং পরোপকারের গুণাবলী বিদ্যমান থাকে।

১. ঈমান:

মোমিনের প্রধান গুণ হলো ঈমান বা বিশ্বাস। আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের প্রতি সম্পূর্ণ বিশ্বাস রাখা।

২. সালাত (নামাজ):

মোমিনেরা নিয়মিত সালাত আদায় করে। কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন: “যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে এবং নামাজ কায়েম করেছে…” (সূরা বাকারা, আয়াত ৩)

৩. যাকাত:

মোমিনেরা তাদের সম্পদ থেকে নির্দিষ্ট অংশ যাকাত হিসেবে দান করে। “… এবং তাদের সম্পদ থেকে কিছু অংশ যাকাত দেয়।” (সূরা বাকারা, আয়াত ৪৩)

৪. রোজা:

মোমিনেরা রমজান মাসে রোজা রাখে। কোরআনে বলা হয়েছে: “হে মুমিনগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে…” (সূরা বাকারা, আয়াত ১৮৩)

৫. কোরআন এবং হাদিসের নির্দেশনা মেনে চলা:

মোমিনেরা কোরআন এবং হাদিসের নির্দেশনা মেনে চলে এবং সেগুলো অনুযায়ী তাদের জীবন পরিচালনা করে।

৬. সত্যবাদিতা:

মোমিনেরা সবসময় সত্য কথা বলে এবং মিথ্যা থেকে বিরত থাকে।

৭. ধৈর্য:

মোমিনেরা ধৈর্য ধারণ করে এবং সকল প্রতিকূলতায় আল্লাহর উপর ভরসা রাখে। কোরআনে বলা হয়েছে: “নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন।” (সূরা বাকারা, আয়াত ১৫৩)

৮. পরোপকারিতা:

মোমিনেরা দানশীল এবং অন্যের উপকার করে।

৯. বিনয়:

মোমিনেরা বিনয়ী এবং অহংকার থেকে দূরে থাকে।

১০. আল্লাহর প্রতি পূর্ণ ভরসা:

মোমিনেরা সকল কাজে আল্লাহর উপর পূর্ণ ভরসা রাখে।

১১. ক্ষমাশীলতা:

মোমিনেরা অন্যদের ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করে এবং প্রতিশোধপরায়ণ হয় না। কোরআনে বলা হয়েছে: “আর তোমরা ক্ষমা কর এবং চোখ বুজে যাও; আল্লাহ তো ক্ষমাশীলতা পছন্দ করেন।” (সূরা আন-নূর, আয়াত ২২)

১২. আমানতদারী:

মোমিনেরা বিশ্বাসঘাতকতা করে না এবং তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করে। কোরআনে বলা হয়েছে: “নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দেন যে, তোমরা আমানত তার মালিকের কাছে পৌঁছে দাও।” (সূরা আন-নিসা, আয়াত ৫৮)

১৩. ন্যায়পরায়ণতা:

মোমিনেরা সবসময় ন্যায়পরায়ণতা অবলম্বন করে এবং অন্যায় থেকে বিরত থাকে।

১৪. সাবধানতা:

মোমিনেরা সব কাজে সাবধানতা অবলম্বন করে এবং তাদের কথা ও কাজে সতর্ক থাকে।

১৫. আত্মশুদ্ধি:

মোমিনেরা নিজেদের অন্তর ও আচার-আচরণ শুদ্ধ করার চেষ্টা করে। কোরআনে বলা হয়েছে: “যে ব্যক্তি নিজের অন্তরকে শুদ্ধ করেছে, সেই সফলকাম হয়েছে।” (সূরা আশ-শামস, আয়াত ৯)

১৬. আল্লাহর স্মরণ:

মোমিনেরা সবসময় আল্লাহকে স্মরণ করে এবং তাঁর প্রশংসা করে। কোরআনে বলা হয়েছে: “তোমরা আমাকে স্মরণ করো, আমিও তোমাদের স্মরণ করব।” (সূরা আল-বাকারা, আয়াত ১৫২)

১৭. সৎকর্ম:

মোমিনেরা সৎকর্ম করে এবং অন্যদের সৎকর্ম করতে উৎসাহিত করে।

১৮. কৃপণতা থেকে দূরে থাকা:

মোমিনেরা কৃপণতা করে না এবং দান-খয়রাতে উদার থাকে।

১৯. আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা:

মোমিনেরা সব কাজে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করে। কোরআনে বলা হয়েছে: “তোমরা যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছ, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তোমরা তার আনুগত্য করো।” (সূরা আল-মায়েদা, আয়াত ৩৫)

২০. পরিশ্রমী:

মোমিনেরা কঠোর পরিশ্রম করে এবং তাদের দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করে।

২১. শালীনতা:

মোমিনেরা শালীনতা বজায় রাখে এবং অশালীন কাজ ও কথাবার্তা থেকে বিরত থাকে।

২২. ভালোবাসা সহানুভূতি:

মোমিনেরা একে অপরের প্রতি ভালোবাসা ও সহানুভূতি প্রকাশ করে।

২৩. ধনসম্পদের আসক্তি থেকে মুক্তি:

মোমিনেরা দুনিয়ার ধন-সম্পদের আসক্তি থেকে মুক্ত থাকে এবং পরকালের প্রতি মনোযোগী হয়।

২৪. কৃতজ্ঞতা:

মোমিনেরা আল্লাহর নেয়ামতের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকে এবং তা শোকরগোযার করে।

২৫. পরহেজগারি:

মোমিনেরা আল্লাহর ভয়ে সকল গুনাহ থেকে বিরত থাকে এবং তাঁর বিধান অনুযায়ী জীবন যাপন করে।

২৬. সময়ানুবর্তিতা:

মোমিনেরা সময়ানুবর্তী এবং তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে।

২৭. পরিবারের প্রতি দায়িত্বশীলতা:

মোমিনেরা পরিবারের সদস্যদের প্রতি দায়িত্বশীল এবং তাদের প্রয়োজন মেটানোর চেষ্টা করে।

২৮. সমাজসেবা:

মোমিনেরা সমাজের কল্যাণে কাজ করে এবং মানুষের সেবা করে।

২৯. সততা:

মোমিনেরা সব কাজে সততা বজায় রাখে এবং প্রতারণা থেকে দূরে থাকে।

৩০. ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন:

মোমিনেরা ধর্মীয় জ্ঞান অর্জনে আগ্রহী এবং সেই জ্ঞান অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করে।

আল কোরআনে বর্ণিত এই গুণাবলী মোমিনদের জন্য আদর্শ এবং তাদের জীবনে প্রতিফলিত হওয়া উচিত।

Leave a Comment