আবদুর রহমান / Popular Blog BD
দোয়া হল আল্লাহর প্রতি প্রার্থনা এবং তাঁর নিকট সাহায্য চাওয়ার একটি মাধ্যম। এটি মুসলমানদের দৈনন্দিন জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং ইবাদতের অন্যতম রূপ। দোয়া শুধু আমাদের প্রয়োজনীয়তা পূরণের মাধ্যম নয়, বরং এটি আমাদের অন্তরের প্রশান্তি এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের একটি মাধ্যম। এখানে দোয়ার গুরুত্ব ও ফজিলত নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হল।
দোয়ার সংজ্ঞা ও গুরুত্ব
দোয়া আরবি শব্দ, যার অর্থ আহ্বান করা, প্রার্থনা করা। ইসলামে দোয়া আল্লাহর সাথে সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হয়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, “আর তোমাদের প্রতিপালক বলেছেন, তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব।” (সুরা গাফির, ৪০:৬০)। এই আয়াত থেকে বোঝা যায়, আল্লাহ তায়ালা বান্দার দোয়া শুনেন এবং তার প্রার্থনা মঞ্জুর করেন।
দৈনন্দিন জীবনে ২০টি গুরুত্বপূর্ণ দোয়া ও তার ফজিলত
দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে আমরা আল্লাহর সাহায্য ও করুণা প্রার্থনা করতে দোয়া পড়ি। এখানে ২০টি গুরুত্বপূর্ণ দোয়া ও তার ফজিলত আলোচনা করা হল:
১. ঘুম থেকে ওঠার দোয়া
দোয়া: (الحمد لله الذي أحيانا بعد ما أماتنا وإليه النشور) “আলহামদুলিল্লাহিল্লাযী আহইয়ানা বা’দা মা আমাতানা ওয়া ইলাইহিন নুশূর।”
অর্থ: “সকল প্রশংসা সেই আল্লাহর, যিনি আমাদের মৃত্যুর পর পুনর্জীবিত করলেন, এবং তাঁর দিকেই প্রত্যাবর্তন।”
ফজিলত: ঘুম থেকে ওঠার পর প্রথমেই আল্লাহর শোকর আদায় করা।
২. ঘুমানোর দোয়া
দোয়া: بِاسْمِكَ اللَّهُمَّ أَمُوتُ وَأَحْيَا “বিসমিকাল্লাহুম্মা আমুতু ওয়া আহইয়া।”
অর্থ: “হে আল্লাহ, আপনার নাম নিয়ে আমি মারা যাই এবং জীবিত হই।”
ফজিলত: আল্লাহর উপর পূর্ণ ভরসা রেখে ঘুমানো।
৩. খাওয়ার আগে দোয়া
দোয়া: بِسْمِ ٱللَّٰهِ “বিসমিল্লাহ।”
অর্থ: “আল্লাহর নামে।”
ফজিলত: খাওয়ার সময় আল্লাহর স্মরণ এবং বরকত পাওয়া।
৪. খাওয়ার পরে দোয়া
দোয়া: الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَطْعَمَنَا وَسَقَانَا وَجَعَلَنَا مِنَ الْمُسْلِمِينَ “আলহামদুলিল্লাহিল্লাযী আত্বআমানা ওয়া সাক্বানা ওয়া জা’আলানা মিণাল মুসলিমীন।”
অর্থ: “সকল প্রশংসা সেই আল্লাহর, যিনি আমাদের খাইয়েছেন, পান করিয়েছেন এবং মুসলমান বানিয়েছেন।”
ফজিলত: আল্লাহর শোকর আদায় এবং তাঁর দেওয়া রিজিকের বরকত।
৫. বাথরুমে প্রবেশের দোয়া
দোয়া: اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْخُبُثِ وَالْخَبَائِثِ “আল্লাহুম্মা ইন্নী আউযুবিকা মিনাল খুবসি ওয়াল খাবায়িস।”
অর্থ: “হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি পাপ ও অপবিত্র জিনিস থেকে।”
ফজিলত: ক্ষতিকারক জিনিস থেকে নিরাপত্তা।
৬. বাথরুম থেকে বের হওয়ার দোয়া
দোয়া: غُفْرَانَكَ “গুফরানাকা।”
অর্থ: “হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।”
ফজিলত: পাপ থেকে ক্ষমা এবং পবিত্রতা।
৭. গৃহে প্রবেশের দোয়া
দোয়া: بِسْمِ اللَّهِ وَلَجْنَا وَبِسْمِ اللَّهِ خَرَجْنَا وَعَلَى رَبِّنَا تَوَكَّلْنَا “বিসমিল্লাহি ওয়ালাজনা ওয়া বিসমিল্লাহি খারাজনা ওয়া আলা রব্বিনা তাওয়াক্কালনা।”
অর্থ: “আল্লাহর নামে আমরা প্রবেশ করছি এবং আল্লাহর নামে আমরা বাহির হচ্ছি, আমাদের রবের উপর আমাদের পূর্ণ ভরসা।”
ফজিলত: গৃহে প্রবেশের সময় আল্লাহর স্মরণ এবং নিরাপত্তা।
৮. গৃহ থেকে বের হওয়ার দোয়া
দোয়া: بِسْمِ اللَّهِ تَوَكَّلْتُ عَلَى اللَّهِ لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ “বিসমিল্লাহি তাওয়াক্কালতু আলাল্লাহি লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ।”
অর্থ: “আল্লাহর নামে, আমি আল্লাহর উপর ভরসা করছি, আল্লাহ ছাড়া কোনো শক্তি ও ক্ষমতা নেই।”
ফজিলত: আল্লাহর উপর পূর্ণ ভরসা রেখে বাইরে যাওয়া।
৯. নতুন কাপড় পরার দোয়া
দোয়া: ٱلْحَمْدُ لِلَّـهِ ٱلَّذِي كَسَانِي مَا يُوَارِي بِهِ عَوْرَتِي وَأَتَجَمَّلُ بِهِ فِي حَيَاتِي “আলহামদুলিল্লাহিল্লাযী কাছানী মা উয়ারী বি হি আওরাতী ওয়া আতাজাম্মালু বিহি ফী হায়াতী।”
অর্থ: “সকল প্রশংসা সেই আল্লাহর, যিনি আমাকে এমন কিছু পরিয়েছেন যা আমার দেহ ঢেকে রাখে এবং আমার জীবনে সৌন্দর্য যোগায়।” ফজিলত: নতুন কাপড় পরার সময় আল্লাহর শোকর আদায়।
১০. আয়না দেখার দোয়া
দোয়া: اللَّهُمَّ كَمَا حَسَّنْتَ خَلْقِي فَحَسِّنْ خُلُقِي “আল্লাহুম্মা কামা হাসানতা খালকী ফা হাসিন খুলুকী।”
অর্থ: “হে আল্লাহ, যেভাবে আপনি আমার দেহকে সুন্দর করেছেন, আমার আচার-আচরণকেও তেমনি সুন্দর করুন।”
ফজিলত: বাহ্যিক সৌন্দর্যের সাথে অভ্যন্তরীণ সৌন্দর্যও বৃদ্ধি।
১১. যানবাহনে ওঠার দোয়া
দোয়া: سُبْحَانَ الَّذِي سَخَّرَ لَنَا هَذَا وَمَا كُنَّا لَهُ مُقْرِنِينَ “সুবহানাল্লাযী সাখ্খারা লানা হাজা ওয়া মা কুন্না লাহু মুকরিনীন।”
অর্থ: “সকল প্রশংসা সেই আল্লাহর, যিনি আমাদের জন্য এটিকে বশীভূত করেছেন, অন্যথায় আমরা এটি করতে সক্ষম হতাম না।”
ফজিলত: যাত্রার নিরাপত্তা ও বরকত প্রার্থনা।
১২. শপিংয়ে যাওয়ার দোয়া
দোয়া: لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ، يُحْيِي وَيُمِيتُ، وَهُوَ حَيٌّ لَا يَمُوتُ، بِيَدِهِ الْخَيْرُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
“লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু, ইউহ্যি ওয়াইমিতু, ওয়া হুয়া হায়্যুল লা ইয়ামুতু, বিয়াদিহিল খায়র, ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইইন ক্বাদির।”
অর্থ: “আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, তিনি একক, তার কোনো শরিক নেই, রাজত্ব ও প্রশংসা তাঁরই জন্য, তিনি জীবন দান করেন এবং মৃত্যু দেন, তিনি চিরঞ্জীব, কখনো মৃত্যু হবে না, তাঁর হাতে সকল কল্যাণ, এবং তিনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান।”
ফজিলত: শপিংয়ের সময় নিরাপত্তা এবং বরকত।
১৩. কঠিন পরিস্থিতিতে দোয়া
দোয়া: حَسْبُنَا اللَّهُ وَنِعْمَ الْوَكِيلُ “হাসবুনাল্লাহু ওয়া নিমাল ওয়াকিল।”
অর্থ: “আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট এবং তিনি উত্তম কর্ম-সম্পাদনকারী।”
ফজিলত: বিপদে আল্লাহর উপর পূর্ণ ভরসা।
১৪. অজু করার দোয়া
দোয়া: أَشْهَدُ أَنْ لا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لا شَرِيكَ لَهُ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ “আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু, ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহু।”
অর্থ: “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আল্লাহ ছাড়া আর কোনো উপাস্য নেই, তিনি একক, তার কোনো শরিক নেই, এবং আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে মুহাম্মাদ (সা.) তাঁর বান্দা ও রাসূল।”
ফজিলত: অজুর পর পবিত্রতার শোকর।
১৫. রোগমুক্তির দোয়া
দোয়া: اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ البَرَصِ، وَالجُنُونِ، وَالجُذَامِ، وَمِن سَيِّئِ الأَسْقَامِ “আল্লাহুম্মা ইন্নী আউযুবিকা মিনাল বারাসি, ওয়াল জুনুনি, ওয়াল যামামি, ওয়া মিন সায়্যি ইল আসকাম।”
অর্থ: “হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে ধবল, পাগলামী, কুষ্ঠরোগ এবং সমস্ত মন্দ রোগ থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।”
ফজিলত: বিভিন্ন রোগ থেকে আল্লাহর আশ্রয়।
১৬. কাজ শুরুর দোয়া
দোয়া: بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।”
অর্থ: “করুণাময়, দয়ালু আল্লাহর নামে।”
ফজিলত: প্রতিটি কাজের শুরুতে আল্লাহর স্মরণ এবং বরকত।
১৭. কঠিন কাজ করার দোয়া
দোয়া: يَا حَيُّ يَا قَيُّومُ، بِرَحْمَتِكَ أَسْتَغِيثُ، أَصْلِحْ لِي شَأْنِي كُلَّهُ، وَلَا تَكِلْنِي إِلَى نَفْسِي طَرْفَةَ عَيْنٍ “ইয়া হাইয়ু ইয়া ক্বাইয়্যুম, বিরাহমাতিকা আসতাগীসু, আসলিহলী শানি কুল্লাহু, ওয়া লা তাকিলনী ইলা নাফসী তারফাতা আইন।”
অর্থ: “হে চিরঞ্জীব, চিরনির্ভর, আপনার রহমতের দ্বারা আমি সাহায্য প্রার্থনা করছি, আমার সকল কার্যকলাপ ঠিক করুন, এবং আমাকে এক মুহূর্তের জন্যও আমার নিজের উপর ছেড়ে দিবেন না।”
ফজিলত: কঠিন কাজের সময় আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা।
১৮. দুশ্চিন্তায় দোয়া
দোয়া: اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْهَمِّ وَالْحَزَنِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ الْعَجْزِ وَالْكَسَلِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ الْجُبْنِ وَالْبُخْلِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ غَلَبَةِ الدَّيْنِ وَقَهْرِ الرِّجَالِ “আল্লাহুম্মা ইন্নী আউযুবিকা মিনাল হামী ওয়াল হাজান, ওয়া আউযুবিকা মিনাল আজযি ওয়াল কাসল, ওয়া আউযুবিকা মিনাল জুবনি ওয়াল বুখল, ওয়া আউযুবিকা মিন গালাবাতিদ দাইনি ওয়া কাহরির রিজাল।”
অর্থ: “হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে চিন্তা ও দুঃখ থেকে আশ্রয় চাই, আমি আপনার কাছে অক্ষমতা ও আলস্য থেকে আশ্রয় চাই, আমি আপনার কাছে ভীরুতা ও কৃপণতা থেকে আশ্রয় চাই, এবং আমি আপনার কাছে ঋণের বোঝা এবং মানুষের প্রভাব থেকে আশ্রয় চাই।” ফজিলত: দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে মুক্তি।
১৯. কোরআন পড়ার দোয়া
দোয়া: أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ “আউযু বিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজীম।”
অর্থ: “আমি বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।”
ফজিলত: কোরআন পাঠের সময় শয়তান থেকে সুরক্ষা।
২০. নামাজের দোয়া
দোয়া: رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ “রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনইয়া হাসানাতাওঁ ওয়া ফিল আখিরাতি হাসানাতাওঁ ওয়া ক্বিনা আযাবান নার।”
অর্থ: “হে আমাদের প্রতিপালক, আমাদেরকে দুনিয়াতে কল্যাণ দান করুন এবং আখিরাতেও কল্যাণ দান করুন, এবং আমাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি থেকে রক্ষা করুন।”
ফজিলত: নামাজের শেষে আল্লাহর কাছ থেকে দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ প্রার্থনা।
এই দোয়াগুলো দৈনন্দিন জীবনে পড়ার মাধ্যমে আল্লাহর রহমত, করুণা এবং সাহায্য প্রার্থনা করা যায়। প্রতিটি দোয়ার নিজস্ব ফজিলত আছে যা মানুষের জীবনে বরকত, শান্তি এবং নিরাপত্তা এনে দেয়।