আবদুর রহমান / Popular Blog BD
সূরা আল-ফাতিহা কুরআনের প্রথম সূরা এবং এটি নামাজের অপরিহার্য অংশ, যা প্রতিদিনের পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে পাঠ করা হয়। এটি আল্লাহর প্রশংসা, দয়া, এবং করুণার গুণাবলী বর্ণনা করে এবং সঠিক পথে পরিচালনার জন্য প্রার্থনা করে। মুসলমানদের জন্য এটি ধর্মীয় উপাসনা ও জীবনযাপনের মূল ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। সূরা আল-ফাতিহা আল্লাহর প্রতি সম্পূর্ণ নির্ভরতা এবং তার দয়া ও করুণা স্মরণ করিয়ে দেয়। এটি মুসলমানদের মধ্যে একতা ও বিশ্বাসের একটি শক্তিশালী প্রতীক হিসেবে গণ্য হয়।
সূরা আল-ফাতিহা
আরবি পাঠ: بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ مَالِكِ يَوْمِ الدِّينِ إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ صِرَاطَ الَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّينَ
বাংলা উচ্চারণ: বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন। আর-রাহমানির রাহিম। মালিকি ইয়াওমিদ্দিন। ইয়্যাকা না’বুদু ওয়া ইয়্যাকা নাস্তাঈন। ইহদিনাস সিরাতাল মুসতাকিম। সিরাতাল্লাজিনা আন’আমতা আলাইহিম, গাইরিল মাগদুবি আলাইহিম ওয়ালা দ্বাল্লিন।
অর্থ: ১. পরম করুণাময়, অতি দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি। ২. সকল প্রশংসা আল্লাহর, যিনি সকল সৃষ্টি জগতের পালনকর্তা। ৩. যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু। ৪. যিনি বিচার দিনের মালিক। ৫. আমরা শুধু তোমারই ইবাদত করি এবং শুধু তোমারই সাহায্য প্রার্থনা করি। ৬. আমাদেরকে সরল পথ দেখাও। ৭. তাদের পথ, যাদেরকে তুমি নিয়ামত দিয়েছ, তাদের পথ নয় যাদের প্রতি তোমার ক্রোধ নাযিল হয়েছে এবং যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে।
এই সূরা মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রতিদিনের নামাজের একটি অপরিহার্য অংশ।
সূরা আল ফাতেহা নাযিলের সময় ও প্রেক্ষাপট
সূরা আল ফাতিহা, যা ‘আল-ফাতিহা’ নামে পরিচিত, মক্কায় নাযিল হয়েছে। এটি কুরআনের প্রথম সূরা এবং মোট সাতটি আয়াত নিয়ে গঠিত। এই সূরাটি মক্কার প্রাথমিক সময়ে নাযিল হয়েছিল, যখন মুসলিমরা তখনও মক্কায় অবস্থান করছিলেন এবং ইসলাম ধর্ম প্রচারের প্রাথমিক পর্যায়ে ছিলেন।
নাযিলের প্রেক্ষাপট:
সূরা আল-ফাতিহা এমন সময় নাযিল হয়েছিল যখন মুসলমানরা মক্কায় প্রচণ্ড অত্যাচার ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছিল। এই সূরাটি তাদের মধ্যে সাহস ও ধৈর্য্য যোগানোর জন্য এবং আল্লাহর প্রতি তাদের নির্ভরতা ও আনুগত্য দৃঢ় করার জন্য অবতীর্ণ হয়। এটি একটি দোয়া সূরা হিসেবে পরিচিত, যা মুসলমানরা তাদের প্রতিদিনের নামাজে ব্যবহার করেন। সূরা আল-ফাতিহা আল্লাহর প্রশংসা ও তার অনুগ্রহের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে এবং আল্লাহর কাছে পথপ্রদর্শনের জন্য প্রার্থনা জানানো হয়।
এই সূরার প্রতিটি আয়াত মুসলমানদের বিশ্বাস ও জীবনযাপনের মূল ভিত্তি প্রতিফলিত করে। এটি মুসলমানদের মনে করিয়ে দেয় যে আল্লাহই একমাত্র উপাস্য এবং সমস্ত সাহায্য ও পথপ্রদর্শন শুধুমাত্র আল্লাহর কাছ থেকেই আসে। এছাড়া, এটি মুসলমানদেরকে প্রতিদিনের জীবনযাত্রায় আল্লাহর ওপর নির্ভর করতে এবং সঠিক পথে পরিচালিত হওয়ার জন্য দোয়া করতে উৎসাহিত করে।
সূরা আল ফাতিহার ২০টি নাম
সূরা আল-ফাতিহার বিভিন্ন নাম রয়েছে, যা এই সূরার গুরুত্ব ও মহিমা প্রতিফলিত করে। কুরআনের বিভিন্ন তাফসির এবং ইসলামী সাহিত্যে এই সূরাটির উল্লেখ করা বিভিন্ন নামের মধ্যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য নাম হলো:
- আল-ফাতিহা (الفاتحة) – আরম্ভকারী বা উদ্বোধনী সূরা।
- উম্মুল কিতাব (أم الكتاب) – কিতাবের মা বা মূল গ্রন্থ।
- উম্মুল কুরআন (أم القرآن) – কুরআনের মা।
- আস-সাব আল-মাসানী (السبع المثاني) – পুনরাবৃত্ত সাত আয়াত।
- আল-হামদ (الحمد) – প্রশংসা সূরা।
- আশ-শিফা (الشفاء) – আরোগ্য।
- আর-রুকইয়া (الرُّقْية) – ঝাড়-ফুঁক বা নিরাময়।
- আল-কানয (الكنز) – ধনভাণ্ডার।
- আস-সালাত (الصلاة) – প্রার্থনা।
- আল-দু’আ (الدعاء) – প্রার্থনা।
- আল-ওয়াফিয়া (الوافية) – পরিপূর্ণ।
- আল-কাফিয়া (الكافية) – যথেষ্ট।
- আল-কুরআনুল আজীম (القرآن العظيم) – মহান কুরআন।
- আল-সুরাতুল হাকীম (السورة الحكيم) – জ্ঞানপূর্ণ সূরা।
- আল-নূর (النور) – আলো।
- আস-সাব আল-কুরআন (السبع القرآن) – কুরআনের সাত।
- আস-সুরাতুল মুসতাকীম (السورة المستقيمة) – সঠিক পথের সূরা।
- আল-রাহমান (الرحمن) – দয়ালু।
- আল-রাহীম (الرحيم) – করুণাময়।
- আল-হাকীম (الحكيم) – প্রজ্ঞাময়।
এই নামগুলো সূরা আল-ফাতিহার বিভিন্ন গুণাবলী এবং গুরুত্বকে নির্দেশ করে এবং মুসলমানদের জীবনে এর প্রভাব ও প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে।
সূরা আল ফাতিহার আয়াতগুলোর ব্যাখা ও শিক্ষা
সূরা আল-ফাতিহার আয়াতগুলোর ব্যাখ্যা ও শিক্ষা:
আয়াত ১:
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ বাংলা উচ্চারণ: বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। অর্থ: পরম করুণাময়, অতি দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।
ব্যাখ্যা ও শিক্ষা: এটি সমস্ত কাজ শুরু করার সময় আল্লাহর নাম স্মরণ করার জন্য নির্দেশ করে। এতে আল্লাহর প্রতি আনুগত্য, কৃতজ্ঞতা এবং তার করুণা ও দয়া স্মরণ করানো হয়।
আয়াত ২:
الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ বাংলা উচ্চারণ: আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন। অর্থ: সকল প্রশংসা আল্লাহর, যিনি সকল সৃষ্টি জগতের পালনকর্তা।
ব্যাখ্যা ও শিক্ষা: এই আয়াতে আল্লাহর প্রশংসা করা হচ্ছে এবং তার সৃষ্টির প্রশংসা করা হচ্ছে। এটি আমাদেরকে আল্লাহর দয়ালুতা এবং সৃষ্টির প্রতি তার যত্নের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।
আয়াত ৩:
الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ বাংলা উচ্চারণ: আর-রাহমানির রাহিম। অর্থ: যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।
ব্যাখ্যা ও শিক্ষা: এই আয়াতে আল্লাহর দুটি গুণের উল্লেখ করা হয়েছে, যা তার দয়া ও করুণা প্রকাশ করে। এটি আমাদেরকে আল্লাহর কাছ থেকে দয়া ও করুণা প্রার্থনা করতে শিখায়।
আয়াত ৪:
مَالِكِ يَوْمِ الدِّينِ বাংলা উচ্চারণ: মালিকি ইয়াওমিদ্দিন। অর্থ: যিনি বিচার দিনের মালিক।
ব্যাখ্যা ও শিক্ষা: এই আয়াতে আল্লাহর বিচার ক্ষমতা এবং বিচার দিনের উপর তার নিয়ন্ত্রণের কথা বলা হয়েছে। এটি আমাদেরকে আল্লাহর সামনে আমাদের কাজের হিসাব দিতে হবে তা স্মরণ করিয়ে দেয়।
আয়াত ৫:
إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ বাংলা উচ্চারণ: ইয়্যাকা না’বুদু ওয়া ইয়্যাকা নাস্তাঈন। অর্থ: আমরা শুধু তোমারই ইবাদত করি এবং শুধু তোমারই সাহায্য প্রার্থনা করি।
ব্যাখ্যা ও শিক্ষা: এই আয়াতে আল্লাহর প্রতি একনিষ্ঠ উপাসনা এবং সাহায্যের জন্য তার উপর নির্ভরতা ব্যক্ত করা হয়েছে। এটি আমাদেরকে আল্লাহর প্রতি আনুগত্য ও নির্ভরতা শেখায়।
আয়াত ৬:
اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ বাংলা উচ্চারণ: ইহদিনাস সিরাতাল মুসতাকিম। অর্থ: আমাদেরকে সরল পথ দেখাও।
ব্যাখ্যা ও শিক্ষা: এই আয়াতে সঠিক পথে পরিচালিত হওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা হয়েছে। এটি আমাদেরকে আল্লাহর কাছ থেকে পথপ্রদর্শন ও সঠিক দিকনির্দেশনার জন্য দোয়া করতে শেখায়।
আয়াত ৭:
صِرَاطَ الَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّينَ বাংলা উচ্চারণ: সিরাতাল্লাজিনা আন’আমতা আলাইহিম, গাইরিল মাগদুবি আলাইহিম ওয়ালা দ্বাল্লিন। অর্থ: তাদের পথ, যাদেরকে তুমি নিয়ামত দিয়েছ, তাদের পথ নয় যাদের প্রতি তোমার ক্রোধ নাযিল হয়েছে এবং যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে।
ব্যাখ্যা ও শিক্ষা: এই আয়াতে আল্লাহর নিয়ামতপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের পথের অনুসরণের জন্য প্রার্থনা করা হয়েছে এবং তাদের পথ থেকে দূরে থাকার জন্য দোয়া করা হয়েছে যাদের উপর আল্লাহর ক্রোধ নাযিল হয়েছে এবং যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে। এটি আমাদেরকে সঠিক পথের অনুসারী হওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করতে শেখায়।