আবদুর রহমান / Popular Blog BD
আরবী পাঠ:
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ
- تَبَّتۡ یَدَاۤ اَبِیۡ لَهَبٍ وَّ تَبَّ
- مَا أَغْنَىٰ عَنْهُ مَالُهُ وَمَا كَسَبَ
- سَيَصْلَىٰ نَارًا ذَاتَ لَهَبٍ
- وَّ امۡرَاَتُهٗ ؕ حَمَّالَۃَ الۡحَطَبِ
- فِي جِيدِهَا حَبْلٌ مِّن مَّسَدٍ
বাংলা উচ্চারণ:
- তাব্বাত ইয়াদা আবি লাহাবিওঁ ওয়াতাব্বা
- মা আগনা আনহু মালুহু ওয়ামা কাসাব
- সায়াসলা নারান যা তা লাহাব
- ওয়াম্রা-আতুহু হাম্মা-লাতাল হাতাব
- ফি জীদি-হা হাবলুম মিম মাসাদ
বাংলা অর্থ:
- ধ্বংস হোক আবু লাহাবের দুই হাত এবং ধ্বংস হোক সে নিজে।
- তার ধন-সম্পদ এবং যা সে উপার্জন করেছে, তা তাকে রক্ষা করবে না।
- সে শীঘ্রই প্রবেশ করবে জ্বলন্ত আগুনে।
- আর তার স্ত্রী আগুন বহনকারিনী।
- তার গলায় খর্জুরের আঁশের রশি।
সূরা লাহাব, যা সূরা আল-মাসাদ নামেও পরিচিত, কুরআনের ১১১তম সূরা। এটি মক্কায় অবতীর্ণ একটি ছোট্ট সূরা, যার মধ্যে মোট পাঁচটি আয়াত রয়েছে। এই সূরাটি ইসলামের প্রথম যুগের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার প্রতিফলন ঘটায় এবং এতে আল্লাহ তায়ালা তাঁর পয়গম্বর মুহাম্মদ (সা.) এর বিরোধিতাকারীদের প্রতি কড়া বার্তা প্রদান করেছেন।
পটভূমি:
এই সূরাটি অবতীর্ণ হয়েছিল নবী করীম (সা.) এর চাচা আবু লাহাব এবং তাঁর স্ত্রী উম্মে জামিলের বিরোধিতার প্রেক্ষিতে। আবু লাহাব এবং উম্মে জামিল ইসলাম এবং নবী করীম (সা.) এর প্রতি চরম শত্রুতা পোষণ করতেন। তারা নবী করীম (সা.) এবং তাঁর অনুসারীদের নানাভাবে হয়রানি এবং অত্যাচার করতেন।
বিষয়বস্তু এবং ব্যাখ্যা:
- আয়াত ১: “তাব্বাত ইয়াদা আবি লাহাবিওঁ ওয়া তাব্বা।” (ধ্বংস হোক আবু লাহাবের দুই হাত এবং ধ্বংস হোক সে নিজে।)
- এই আয়াতে আবু লাহাবের প্রতি আল্লাহর ক্রোধ এবং ধ্বংসের বার্তা রয়েছে। “তব্বত” শব্দটি ধ্বংসের অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে, যা আবু লাহাবের অশুভ কার্যকলাপের পরিণতির প্রতি ইঙ্গিত করে।
- আয়াত ২: “মা আগনা আনহু মালুহু ওয়া মা কাসাব।” (তার ধন-সম্পদ এবং যা সে উপার্জন করেছে, তা তাকে রক্ষা করবে না।)
- আবু লাহাব তার সম্পদ এবং প্রতিপত্তি নিয়ে গর্ব করতেন, কিন্তু আল্লাহ তায়ালা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিচ্ছেন যে, এগুলো তাকে কোন উপকারে আসবে না এবং তাকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে পারবে না।
- আয়াত ৩: “সায়াসলা নারান যা তা লাহাব।” (সে শীঘ্রই প্রবেশ করবে জ্বলন্ত আগুনে।)
- এই আয়াতে আল্লাহ তায়ালা আবু লাহাবের পরকালীন পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। সে জাহান্নামের জ্বলন্ত আগুনে দগ্ধ হবে।
- আয়াত ৪: “ওয়া-ম্রা-আতুহু হাম্মা-লাতাল হাতাব।” (আর তার স্ত্রী আগুন বহনকারিনী।)
- আবু লাহাবের স্ত্রী উম্মে জামিলও ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে সক্রিয় ছিলেন। এই আয়াতে আল্লাহ তাকে আগুন বহনকারিনী হিসেবে বর্ণনা করেছেন, যা তার শত্রুতা এবং ক্ষতিকর কার্যকলাপের প্রতীক।
- আয়াত ৫: “ফী জী-দি-হা হাব-লুম মিম মাসাদ।” (তার গলায় খর্জুরের আঁশের রশি।)
- উম্মে জামিলের জন্য নির্ধারিত শাস্তির বিবরণ দেওয়া হয়েছে এই আয়াতে। তার গলায় খর্জুরের আঁশের রশি বেঁধে তাকে শাস্তি দেওয়া হবে।
প্রভাব এবং শিক্ষা:
সূরা লাহাব মুসলিম সমাজে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। এটি নবী করীম (সা.) এর জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়কে চিহ্নিত করে এবং ইসলামের বিরোধিতাকারীদের বিরুদ্ধে আল্লাহর শক্তিশালী বার্তা প্রদান করে। সূরাটি আমাদেরকে শিখায় যে, আল্লাহ তায়ালা তাঁর প্রিয় বান্দাদের রক্ষা করেন এবং শত্রুদের ধ্বংস করেন। এটি আমাদেরকে সতর্ক করে দেয় যে, সম্পদ এবং প্রতিপত্তি পরকালে কোন কাজে আসবে না, বরং সৎকর্ম এবং আল্লাহর প্রতি অনুগত্যই পরকালে রক্ষা করবে।