কোরআন নযিলের উদ্দেশ্যঃ কোরআন কেবল তেলোয়াত করে ফজিলত অর্জনের জন্য নাযিল হয়নি

মহাগ্রন্থ আল কুরআন একটি পবিত্র, নির্ভুল ও সর্বকালের সেরা ধর্মগ্রন্থ, যা আল্লাহ তায়ালার পবিত্র বাণী। এটি হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর উপর প্রায় দীর্ঘ ২৩ বছরে নাজিল হয়েছে। কুরআনে মোট ১১৪টি সূরা এবং ৬,৬৬৬টি আয়াত রয়েছে। কুরআনকে কেবলমাত্র আল্লাহর বাণী হিসেবে বিশ্বাস করাই যথেষ্ট নয়, বরং এটি সমগ্য মানবজাতির জন্য একটি সম্পূর্ণ জীবনবিধান এ কিশ্বাস ও করতে হবে। কুরআনের ভাষা অত্যন্ত সুন্দর ও প্রাঞ্জল এবং এটি বিভিন্ন বিষয়ের উপর দিকনির্দেশনা প্রদান করে।

কুরআন আত্মশুদ্ধি, নৈতিকতা, এবং আল্লাহর সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ প্রদান করে। এটি অতীতের নবী ও রাসূলদের কাহিনী এবং বিভিন্ন জাতির ইতিহাস বর্ণনা করে, যাতে মানুষ শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। কুরআন বিজ্ঞান, আইন, সমাজ, অর্থনীতি, এবং ব্যক্তিগত জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নির্দেশনা প্রদান করে। এটি মানুষের জন্য শান্তি, ন্যায়বিচার, এবং সমতা প্রতিষ্ঠার মাপকাঠি হিসেবে কাজ করে।

আল কোরআন নাযিলের উদ্দেশ্য

কুরআন কেবল তেলাওয়াত করে সওয়াব অর্জনের জন্যই নাজিল হয়নি; বরং এটি মানবজাতির জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান হিসেবে নাজিল হয়েছে। কুরআনের মূল উদ্দেশ্য হলো মানুষের জীবনের সবক্ষেত্রে দিকনির্দেশনা প্রদান করা, তাদের সঠিক পথে পরিচালিত করা, এবং আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস ও আনুগত্য বাড়ানো।

নিচে কুরআনের বিভিন্ন উদ্দেশ্য তুলে ধরা হলো:

আল কোরআন মুসলমানদের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান যা তাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সঠিক পথনির্দেশনা প্রদান করে। কোরআন শুধুমাত্র একটি ধর্মগ্রন্থ নয়, বরং এটি একটি জীবনধারার মানচিত্র। এটি মানবজাতিকে কল্যাণের পথে পরিচালিত করে এবং তাদের সুখী ও সার্থক জীবন যাপনের নির্দেশনা দেয়। এর মাধ্যমে মানুষ তাদের জীবনের উদ্দেশ্য বুঝতে পারে এবং একটি সার্থক ও পূর্ণাঙ্গ জীবন যাপন করতে পারে। কুরআন নাজিলের মূল উদ্দেশ্য হল মানুষের সঠিক পথনির্দেশনা প্রদান করা। কুরআনকে মুসলমানদের জন্য একটি সম্পূর্ণ জীবনবিধান হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যা আল্লাহর থেকে নাজিল হয়েছে। এর মাধ্যমে মানুষ আল্লাহর নির্দেশিত সঠিক পথে চলার জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও উপদেশ পায়।

আল্লাহ আল কোরআনে বলেন, — “রমজান মাস, যাতে কুরআন নাজিল করা হয়েছে, মানুষের জন্য পথনির্দেশক এবং স্পষ্ট পথনির্দেশনা ও সত্যের মধ্যবর্তী পার্থক্যকারী হিসেবে।”- সূরা আল-বাকারাহ (২:১৮৫)

কুরআন নাজিলের মূল উদ্দেশ্য হলো আত্মশুদ্ধি ও নৈতিকতা উন্নয়ন। এটি মানুষের অন্তরকে শুদ্ধ করে, খারাপ চিন্তা ও প্রবৃত্তি থেকে মুক্ত করতে সাহায্য করে এবং উন্নত চরিত্র ও নৈতিকতা গঠনের উপায় বর্ণনা করে। কুরআনের মাধ্যমে আল্লাহর স্মরণ, তাওবা, ইস্তিগফার, এবং দোয়ার মাধ্যমে মানুষের আত্মাকে পবিত্র করা হয়। এটি সৎকর্ম, ন্যায়বিচার, ধৈর্য, এবং কৃতজ্ঞতার মাধ্যমে নৈতিক উন্নয়নের নির্দেশনা প্রদান করে।

আল্লাহর আদেশ ও নিষেধ মেনে চলা, দয়া ও সহানুভূতির শিক্ষা, এবং শিরকমুক্ত সমাজ গঠনের মাধ্যমে কুরআন নৈতিকতার ভিত্তি স্থাপন করে। এটি মানুষের মধ্যে সত্য, ন্যায়, এবং ইনসাফ প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানায়। কুরআন শিক্ষা দেয় কিভাবে আত্মসংযম, তাকওয়া, এবং আন্তরিকতার মাধ্যমে একজন মুমিন আল্লাহর নিকটবর্তী হতে পারে। এর ফলে, ব্যক্তি ও সমাজে একটি উন্নত নৈতিক পরিবেশ সৃষ্টি হয়, যা শান্তি ও সমৃদ্ধি বয়ে আনে।

আল্লাহ ইরশাদ করেন — “সে ব্যক্তি সফলকাম হয়েছে, যে নিজেকে শুদ্ধ করেছে এবং সে ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যে নিজেকে কলুষিত করেছে।”সূরা আশ-শামস (৯১:৯-১০)

অন্য এক আয়াতে আল্লাহ বলেন- “নিশ্চয়ই আল্লাহ ন্যায়বিচার, সৎকর্ম এবং আত্মীয়স্বজনকে দান করার নির্দেশ দেন এবং তিনি অশ্লীলতা, অন্যায় ও বিদ্রোহ থেকে নিষেধ করেন। তিনি তোমাদের উপদেশ দেন, যাতে তোমরা স্মরণ রাখ।” – সূরা আন-নাহল (১৬:৯০)

কুরআন নাজিলের একটি প্রধান উদ্দেশ্য হলো সামাজিক ন্যায়বিচার ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করা। কুরআন মানব সমাজের সবক্ষেত্রে ন্যায়বিচার এবং সমতা প্রতিষ্ঠার জন্য বিভিন্ন নির্দেশনা প্রদান করে। এটি নিরপেক্ষতা, সততা, এবং সত্যের পক্ষে অবস্থান নেওয়ার গুরুত্বকে তুলে ধরে। কুরআনে বারবার উল্লেখ করা হয়েছে যে, সকল মানুষ আল্লাহর কাছে সমান এবং তাদের মধ্যে কোন প্রকার বৈষম্য করা উচিত নয়। আল্লাহ মানুষকে নির্দেশ দিয়েছেন ন্যায়বিচারের সাথে সমাজ পরিচালনা করতে এবং দুর্নীতি, অন্যায়, এবং জুলুম থেকে বিরত থাকতে।

কুরআন সাক্ষ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে ন্যায়বিচার বজায় রাখার উপর গুরুত্ব দেয় এবং মানুষকে সত্যের পক্ষে সাক্ষ্য দিতে এবং অন্যায় থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেয়। কুরআন আরও শিক্ষা দেয় যে, ধনী ও গরীব, শক্তিশালী ও দুর্বল সকলের জন্য ন্যায়বিচার সমান হতে হবে। কুরআনের এই শিক্ষাগুলি সমাজে শান্তি, নিরাপত্তা, এবং স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহায়ক। সামাজিক ন্যায়বিচার ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে কুরআন একটি সুশৃঙ্খল, শান্তিপূর্ণ এবং সমৃদ্ধ সমাজ গঠনের পথ প্রদর্শন করে।

সূরা আন-নিসা (৪:১৩৫) তে বলা হয়েছে, “হে মুমিনগণ! তোমরা ন্যায়বিচারের উপর দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত থাকো, আল্লাহর উদ্দেশ্যে সাক্ষ্য প্রদানকারী হিসেবে, যদিও তা তোমাদের নিজেদের বা পিতা-মাতা ও আত্মীয়স্বজনের বিরুদ্ধে হয়।”

কুরআন নাজিলের একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হলো ইলম (জ্ঞান) ও জ্ঞানার্জনের গুরুত্ব প্রতিষ্ঠা করা। কুরআনের প্রথম অবতীর্ণ হওয়া আয়াতেই মানুষকে পড়াশোনা ও জ্ঞানার্জনের আহ্বান জানানো হয়েছে। সূরা আল-আলাক (৯৬:১-৫) তে বলা হয়েছে, “পড়ো, তোমার প্রভুর নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন। তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন জমাট রক্ত থেকে। পড়ো, এবং তোমার প্রভু সবচেয়ে মহান, যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন, মানুষকে শিক্ষা দিয়েছেন যা সে জানতো না।” এই আয়াতগুলো থেকে বোঝা যায় যে, জ্ঞানার্জন আল্লাহর নিকট অত্যন্ত মূল্যবান এবং এটি মানবজাতির উন্নতির মূল চাবিকাঠি।

কুরআন বিভিন্ন বিষয়ের উপর জ্ঞানার্জনের গুরুত্ব তুলে ধরেছে, যেমন: ধর্ম, বিজ্ঞান, ইতিহাস, এবং নৈতিকতা। কুরআন মানুষকে চিন্তা ও গবেষণা করার জন্য উৎসাহিত করে এবং প্রকৃতি ও সৃষ্টির বিভিন্ন নিদর্শন সম্পর্কে ভাবতে উদ্বুদ্ধ করে। সূরা আল-ইমরান (৩:১৯০-১৯১) তে বলা হয়েছে, “নিশ্চয়ই আসমান ও জমিনের সৃষ্টিতে এবং রাত ও দিনের পরিবর্তনে চিন্তাশীলদের জন্য নিদর্শন রয়েছে। যারা দাঁড়িয়ে, বসে এবং শুয়ে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং আসমান ও জমিনের সৃষ্টি সম্পর্কে চিন্তা করে বলে, হে আমাদের প্রভু, তুমি এগুলো নিরর্থক সৃষ্টি করোনি, তুমি পবিত্র, আমাদের জাহান্নামের শাস্তি থেকে রক্ষা কর।” এইভাবে, কুরআন মানুষকে জ্ঞানার্জন ও গবেষণার মাধ্যমে আল্লাহর সৃষ্টির মহত্ত্ব উপলব্ধি করতে এবং জীবনের সর্বক্ষেত্রে জ্ঞান প্রয়োগ করতে উৎসাহিত করে।

কুরআন নাজিলের একটি প্রধান উদ্দেশ্য হলো মানুষের সাথে আল্লাহর সম্পর্ক উন্নয়ন। কুরআন মানুষের জন্য আল্লাহর নির্দেশনা ও বাণী হিসেবে কাজ করে, যা তাদের জীবনকে সঠিক পথে পরিচালিত করে এবং আল্লাহর সাথে গভীর সম্পর্ক স্থাপনে সহায়তা করে। কুরআন আল্লাহর একত্বের উপর জোর দেয় এবং মানুষকে তাওহীদের শিক্ষা প্রদান করে, যা আল্লাহর সাথে সম্পর্কের মূল ভিত্তি। সূরা আল-ইখলাস (১১২:১-৪) তে বলা হয়েছে, “বল, তিনি আল্লাহ, একক। আল্লাহ সবকিছুর উপর নির্ভরশীল। তিনি কোন সন্তান গ্রহণ করেননি এবং তিনি কারো সন্তান নন। এবং কেউই তার সমতুল্য নয়।”

কুরআন মানুষকে দোয়া, ইবাদত, তাওবা এবং ইস্তিগফারের মাধ্যমে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক মজবুত করার পথ দেখায়। সূরা আল-বাকারাহ (২:১৮৬) তে বলা হয়েছে, “যখন আমার বান্দারা তোমার কাছে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে, তখন বলে দাও যে, আমি কাছেই আছি। যখন কেউ আমাকে ডাকে, আমি তার ডাকে সাড়া দিই।” কুরআন মানুষকে আল্লাহর স্মরণে নিরন্তর মনোনিবেশ করতে এবং আল্লাহর পথে চলতে উৎসাহিত করে। এইভাবে, কুরআনের নির্দেশনা ও উপদেশ অনুসরণ করে মানুষ আল্লাহর প্রতি তাদের ঈমান ও আনুগত্য বৃদ্ধি করতে পারে এবং একটি শান্তিপূর্ণ ও সফল জীবনযাপন করতে পারে।

কুরআন পরকালের জীবন এবং সেখানে জবাবদিহিতার বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দেয়। এই দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী জীবনই শেষ নয় বরং মৃত্যুর পর রয়েছে এক অনন্ত জীবন। যেখানে দুনয়িার সকল কাজকর্মের পুরোপুরি হিসেব দিতে হবে। ভাল কর্মের জন্য থাকবে চির সুখের জান্নাত আর মন্দ কাজের জন্য চরম অশান্তির জাহান্নাম।

আল্লাহ বলেন- أَيَحْسَبُ الْإِنسَانُ أَن يُتْرَكَ سُدًى

“মানুষ কি ধারণা করে যে, তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে অর্থহীনভাবে?” – [ আল কিয়ামাহঃআয়াত – ৩৬ ]

এই আয়াতটি মানুষকে মনে করিয়ে দেয় যে, পৃথিবীতে তাদের জীবন উদ্দেশ্যহীন নয় এবং আল্লাহ তাদের সৃষ্টি করেছেন একটি নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য ও দায়িত্ব সহকারে। আল্লাহ তাদের কাজের জন্য জবাবদিহি করবেন এবং এই জীবন একটি পরীক্ষামূলক জীবন।

অনত্র আল্লাহ বলেন-

أَفَحَسِبْتُمْ أَنَّمَا خَلَقْنَاكُمْ عَبَثًا وَأَنَّكُمْ إِلَيْنَا لَا تُرْجَعُونَ

“তোমরা কি ধারণা করেছিলে যে, আমি তোমাদেরকে অযথা সৃষ্টি করেছি এবং তোমরা আমাদের কাছে ফিরে আসবে না?” – [ সূরা মু’মিনুনঃ১১৫ ]

এই আয়াতটি মানুষের সৃষ্টির উদ্দেশ্য এবং তাদের পরকালে আল্লাহর কাছে ফিরে যাওয়ার বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দেয়। এটি মানুষকে মনে করিয়ে দেয় যে, তাদের জীবন অর্থহীন নয় এবং তারা আল্লাহর সামনে তাদের কাজের জন্য জবাবদিহি করবে।

কুরআন শিরকমুক্ত সমাজ গঠনের লক্ষ্যে তাওহীদের উপর গুরুত্বারোপ করে এবং শিরকের কঠোর বিরোধিতা করে।

সূরা ইখলাস (১১২:১-৪) তে বলা হয়েছে, “বল, তিনিই আল্লাহ, একক। আল্লাহ সবকিছুর উপর নির্ভরশীল। তিনি কোন সন্তান গ্রহণ করেননি এবং তিনি কারো সন্তান নন। এবং কেউই তার সমতুল্য নয়।”

কুরআন বিভিন্ন জাতি ও সম্প্রদায়ের মধ্যে শান্তি ও সহাবস্থান প্রতিষ্ঠার দিকনির্দেশনা প্রদান করে।

সূরা আল-হুজুরাত (৪৯:১৩) তে বলা হয়েছে, “হে মানুষ! আমি তোমাদেরকে এক পুরুষ এবং এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা পরস্পরকে চিনতে পার। আল্লাহর কাছে সেই ব্যক্তি সবচেয়ে মর্যাদাবান, যে সবচেয়ে বেশি আল্লাহভীরু।”

কুরআন ব্যক্তি ও সমাজের জন্য বিভিন্ন নৈতিক ও সামাজিক দায়িত্ব নির্ধারণ করে।

সূরা আল-মায়েদা (৫:২) তে বলা হয়েছে, “তোমরা সৎকর্ম এবং আল্লাহভীরুতার ব্যাপারে পরস্পরকে সাহায্য কর, কিন্তু পাপ এবং শত্রুতার ব্যাপারে একে অপরকে সাহায্য করো না।”

কুরআন অর্থনৈতিক জীবনে ন্যায় ও সাম্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিভিন্ন নির্দেশনা প্রদান করে, যেমন জাকাত, সুদবিহীন অর্থনীতি, সাদাকা ইত্যাদি।

সূরা আত-তাওবা (৯:৬০) তে বলা হয়েছে, “জাকাত তো শুধু ফকির, মিসকিন, এবং যারা জাকাত সংগ্রহ করে তাদের জন্য, এবং যারা ইসলামের পথে সাহায্য করতে চায়, এবং যারা ঋণগ্রস্ত, এবং আল্লাহর পথে এবং মুসাফিরের জন্য।”

কুরআন নারী ও পুরুষের মধ্যে সমতা এবং প্রত্যেকের অধিকার ও দায়িত্ব সম্পর্কে নির্দেশনা প্রদান করে।

সূরা আন-নিসা (৪:৩২) তে বলা হয়েছে, “পুরুষ যা অর্জন করে তা তাদের জন্য এবং নারী যা অর্জন করে তা তাদের জন্য। আল্লাহর কাছে তাঁর অনুগ্রহ প্রার্থনা কর।”

কুরআন অসৎ কার্য এবং অপরাধ থেকে বিরত থাকার জন্য নির্দেশনা দেয় এবং এর শাস্তির বিধান প্রদান করে।

সূরা আন-নুর (২৪:২) তে বলা হয়েছে, “যারা ব্যভিচার করে তাদের প্রত্যেককে একশত চাবুক মারো। আর আল্লাহর বিধান কার্যকর করার ব্যাপারে তোমাদের অন্তরে তাদের প্রতি কোন দয়া যেন কাজ না করে।”

  • কুরআন শারীরিক ও মানসিক পবিত্রতার উপর গুরুত্ব দেয় এবং বিভিন্ন স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে দিকনির্দেশনা প্রদান করে।
  • সূরা আল-মায়েদা (৫:৬) তে ওযু, গোসল এবং তায়াম্মুমের বিধান বর্ণনা করা হয়েছে, যা পবিত্রতা বজায় রাখার উপায়।

## প্রতিশ্রুতি ও অঙ্গীকার

  • কুরআন প্রতিশ্রুতি ও অঙ্গীকার পূরণের উপর গুরুত্ব দেয় এবং প্রতারণা থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা প্রদান করে।
  • সূরা আল-মায়েদা (৫:১) তে বলা হয়েছে, “হে মুমিনগণ! তোমরা প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করো।”

কুরআন শিক্ষা ও জ্ঞানের প্রচার ও গুরুত্ব সম্পর্কে ব্যাপকভাবে আলোচনা করে এবং মানুষকে জ্ঞানার্জনের জন্য উৎসাহিত করে।

সূরা আল-মুজাদালাহ (৫৮:১১) তে বলা হয়েছে, “আল্লাহ তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে এবং যারা জ্ঞান প্রাপ্ত হয়েছে তাদের মর্যাদা বাড়িয়ে দেবেন।”

কুরআন দয়া, সহানুভূতি এবং মানবতার উপর গুরুত্ব দেয় এবং মানুষকে তাদের নিকটতম মানুষদের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে নির্দেশ দেয়।

সূরা আল-বাকারা (২:১৭৭) তে বলা হয়েছে, “নেকী এই নয় যে তোমরা তোমাদের মুখ পূর্ব বা পশ্চিম দিকে ফিরাবে, বরং নেকী হলো আল্লাহ, পরকাল, ফেরেশতাগণ, কিতাব এবং নবীগণের প্রতি ঈমান আনা এবং আত্মীয়স্বজন, এতিম, মিসকিন, মুসাফির ও সাহায্যপ্রার্থীকে ধন-সম্পদ দান করা।”

কুরআন কেবল তেলাওয়াত করার জন্য নয়, শতশত বা হাজার হাজার নেকি হাসিল করে ফজিলত অর্জনের জন্যই কেবল নাযিল হয়নি। বরং এটি নাযিল হয়েছে মানুষের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে দিকনির্দেশনা, শিক্ষা, এবং উন্নয়নের জন্য। এর উদ্দেশ্য হলো মানুষের জীবনের সব দিককে শুদ্ধ, সঠিক, এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের পথে পরিচালিত করা।

তাই, আসুন আমরা আল কোরআনের আলোকে আমাদের সার্বিক জীবনকে ঢেলে সাঁজাই এবং পরিচালনা করি।

Leave a Comment